মহানবী (সা.) যে ৩ টি স্থানে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছেন

1837

৩ টি স্থানে মহানবী (সা.) বিদায় হজের- পবিত্র হজ ফরজ হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের প্রথম ও শেষ হজে আরাফার মরু প্রান্তরে প্রায় সোয়া লাখ মানুষের সমাবেশে হজরত মুহাম্মদ (সা.) যে ভাষণ দেন, ইসলামের ইতিহাসে তা-ই ‘হাজ্জাতুল বিদা’ বা ‘বিদায় হজ’ নামে পরিচিত।

এই ভাষণ এক মজলিসেই শেষ হয়ে যায়নি, বরং তিনটি ধাপে, তিনটি স্থানে এই ভাষণ দেওয়া হয়। নিচে সেই তিনটি স্থানের পরিচিতি তুলে ধরা হলো।

মসজিদে নামিরা-

আরাফার মসজিদের নাম হলো মসজিদে নামিরা। আরাফার ময়দানের পশ্চিম সীমান্তে রয়েছে এই মসজিদ। মসজিদের পশ্চিম পাশে ছোট্ট একটি পাহাড় রয়েছে, যার নাম নামিরা। আরাফার দিন রাসুল (সা.)-এর তাঁবু এখানেই স্থাপন করা হয়েছিল।

সূর্য ঢলার পর তিনি এরই নিকটবর্তী ওয়াদি উরানায় (উরানা উপত্যকায়) হজের খুতবা প্রদান করেন এবং নামাজের ইমামতি করেন। এটিই হলো বিদায় হজের প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ভাষণ।

যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি খুতবা প্রদান করেন এবং ইমামতি করেন, সেখানে হিজরির দ্বিতীয় শতকে মসজিদ (মসজিদে নামিরা) নির্মাণ করা হয়। এই উপত্যকা (ওয়াদি উরানা) আরাফার সীমানার বাইরে।

ফলে এখানে নির্মিত মসজিদটিও আরাফার সীমানার বাইরে ছিল। পরবর্তী সময় মসজিদটি প্রশস্ত হতে থাকে।

এভাবে মসজিদের পেছনের অংশ আরাফার সীমানার মধ্যে বিস্তৃত হয়। এ কারণেই মসজিদে নামিরার কিছু অংশ (পুরনো অংশ) আরাফার সীমানার বাইরে আর কিছু অংশ আরাফার সীমানার মধ্যে পড়েছে। মসজিদের ভেতরে দুই সীমানার মধ্যে বোর্ড ঝোলানো রয়েছে, যাতে লেখা আছে যে ‘এখান থেকে আরাফার সীমানার বাইরে।’

যাতে জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করার পর আরাফার বাইরের অংশে নামাজ আদায়কারী হাজিরা পিছে সরে আরাফার সীমানার মধ্যে এসে উকুফে আরাফা করতে পারেন। বর্তমানে মসজিদের পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে দৈর্ঘ্য ৩৪০ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে প্রস্থ ২৪০ মিটার। প্রায় সাড়ে তিন লাখ লোক এতে নামাজ আদায় করতে পারে। (তারিখে মক্কাতুল মুকাররমা)

জাবালে রহমত-

মসজিদে নামিরা থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে, আরাফার ময়দানের পূর্ব দিকে (বর্তমান ৭ ও ৮ নম্বর সড়কের মধ্যে রয়েছে জাবালে রহমত। এটি কঠিন পাথরের চাঁইবিশিষ্ট ছোট একটি পাহাড়। পাহাড়টি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৭২ মিটার এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫ মিটার উঁচু।

এই পাহাড়ের উপরিভাগের সমতল স্থানে আট মিটার উঁচু একটি চতুষ্কোণী পিলার রয়েছে, যা দেখে দূর থেকে পাহাড়ের অবস্থান চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। পাহাড়টির আরো কয়েকটি নাম আছে, যেমন- ইলাল, নাবিত ও কুরাইন। (তারিখে মক্কাতুল মুকাররমা)

বিদায় হজে আরাফার দিন শুক্রবার এই পাহাড়ের পাদদেশে একটু উঁচুতে রাসুল (সা.) অবস্থান করছিলেন। ওয়াদি উরানায় (মসজিদে নামিরার সামনের অংশের স্থলে) হজের খুতবা প্রদান ও নামাজের ইমামতি করার পর রাসুল (সা.) তাঁর কাসওয়া নামক উটনীতে আরোহণ করে জাবালে রহমতের কাছে চলে আসেন

এবং এর পাদদেশে ডান দিকে (দক্ষিণ দিকে) একটু উঁচুতে ওই উটনীর ওপর আরোহণ করা অবস্থায় কিবলামুখী হয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া ইত্যাদিতে মশগুল থাকেন। এখানে সুরা মায়েদার প্রসিদ্ধ একটি আয়াত নাজিল হয়।

অর্থ : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বিন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। তবে যে তীব্র ক্ষুধায় বাধ্য হবে, কোনো পাপের প্রতি ঝুঁকে নয় (তাকে ক্ষমা করা হবে), নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩)

উল্লেখ্য, এটি সেই স্থান, যেখানে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় আসার পর হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর প্রথম দেখা হয়েছিল।

মসজিদে খায়েফ-

পাহাড়ের চেয়ে নিচু এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উঁচু স্থানকে আরবি পরিভাষায় খায়েফ বলা হয়। আবার দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকাসম ভূমিকেও খায়েফ বলে থাকে আরবরা। ১০ জিলহজ সকালবেলায় যেখানে দাঁড়িয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই জায়গাটি হলো মসজিদে খায়েফ।

এই মসজিদে রাসুল (সা.) নামাজ আদায় করেছেন। এবং এখানেই ৭০ জন নবী নামাজ আদায় করেছেন। এটি সওর পাহাড়ের বিপরীত দিকে পাহাড়ের অদূরে অবস্থিত। এর কাছেই রয়েছে শয়তানকে কঙ্কর মারার প্রতীকী স্তম্ভ।