সহজ ৩টি আমল করলেই ইন্তেকালের সাথে সাথে জান্নাত পাবে মুমিন

1988

সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জান্নাতের ওয়াদা করেছেন এবং জাহান্নামের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন । সুতরাং যে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত হলো এবং জান্নাতে প্রবেশ করলো সে মহা সফলতা অর্জন করলো…।

আবারো ঐ আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা যিনি আমাদেরকে জান্নাতের পথে আহ্বান করছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট।’ সুতরাং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে ডান হাতে আমলনামা নিয়ে জান্নাতে যেতে হলে একনিষ্ঠতার সঙ্গে অল্প আমলের বিকল্প নেই।

হাদিসে এমন ৩টি আমলের ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, যারা সহজ ৩টি আমল করবে তাদের জান্নাতে যাওয়া একেবারেই সহজ। বাধা হয়ে থাকবে শুধু মৃ’ত্যু। আর তাহলো-

– সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিত ‘সাইয়েদুল ইসতেগফার’ পড়া

সাইয়েদুল ইসতেগফার আল্লাহর এত চমৎকার প্রশংসায় ভরপুর যে, যদিকেউ নিজের গোনাহ মাফের জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চায়; আল্লাহ ওই ব্যক্তি ক্ষমা করে দেন। হাদিসে এসেছে-

‘কেউ যদি আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল ও সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়ে। আর সেদিন সে মারা যায়, আল্লাহর ইচ্ছায় সে জান্নাতে যাবে।’ (বুখারি)

আর তাহলো-

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিং শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিজান্মি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া কোনো প্রভু নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি সাধ্যমত তোমার কাছে দেয়া ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি গুলো পালনে সচেষ্ট আছি।

আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আমাকে যে নেয়ামত দান করেছ, তা স্বীকার করছি এবং আমি আমার পাপগুলো স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কেননা তুমি ছাড়া কেউ ক্ষমাকারী নেই।’

– প্রতিদিন ‘সুরা মুলক’ এক বার পড়া

কুরআনুল কারিমের ২৯তম পারার প্রথম সুরা এটি। এ সুরাটি প্রতিদিন একবার পড়লে মুমিনের জান্নাত সুনিশ্চিত। দৈনন্দিন আমলের সুরাগুলোর মধ্যে এটি একটি। যা প্রতিদিন ইশার নামাজের পর পড়া হয়।

এ ছাড়াও যাদের সুরাটি মুখস্থ আছে, তারা চাইলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেই এ সুরাটি তেলাওয়াত করতে পারে। নামাজে সুরা মুলক-এর আয়াতগুলো বুঝে বুঝে তেলাওয়াত করলে অন্যরকম আবহ তৈরি হয়। নামাজে একনিষ্ঠতা তৈরি হয়।

এ সুরায় মহান আল্লাহর স্মরণ ও তার প্রতি ভয় সৃষ্টি হয় এবং নেক কাজের আগ্রহ বেড়ে যায়। সুরা মুলক পড়ার মাধ্যমে নামাজ আদায় করলে দিনব্যাপী অগণিত খারাপ কাজের মাঝে একটি ভালো কাজ করার অন্যরকম অনুভূতি পাওয়া যায়।

সুরাটির নিয়মিত পাঠকারীকে কবরের আজাব থেকে সুরক্ষা করবেন আল্লাহ তাআলা। কেয়ামতের দিন সুরা মুলক তার তেলাওয়াতকারীকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

– প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়া

প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর কুরআনুল কারিমের মর্যাদাপূর্ণ আয়াত ‘আয়াতুল কুরসি’ পাঠ করা। এ আয়াতে বান্দা তাওহিদের শ্রেষ্ঠ ঘোষণাগুলো তেলাওয়াত করে।

যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়ে, ওই ব্যক্তি ও জান্নাতের মাঝে এতোটুকু দূরত্ব থাকে যে, সে যেন শুধুমাত্র মৃ’ত্যু’ব’র’ণ করছেনা বলেই (কবরে) জান্নাতের নেয়ামতগুলো উপভোগ করতে পারছেনা।

সুতরাং মুমিন বান্দার উচিত, সকাল-সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া। দিনের যে কোনো সময় সুরা মুলক পড়া এবং প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুনিশ্চিত জান্নাত লাভে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ক্ষণস্থায়ী এ পৃথিবী থেকে প্রত্যেক প্রাণীকে আল্লাহ তায়ালার দেয়া নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর তার কাছে ফিরে যাওয়াই হলো মৃ”ত্যু।

মৃ’ত্যু’র অনিবার্যতা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃ’ত্যু’র স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ মৃ’ত্যু চির সত্য বিষয়। মৃ’ত্যু’কে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে এই পৃথিবীতে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মানুষ পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে থাকে ততদিনই তার আমল ও ইবাদত-বন্দেগি করার সময়।

মৃ’তে’র জন্য দান-সদকা করা যাবে। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘মৃ’ত্যু’র পরও মুমিন ব্যক্তির যেসব সৎকর্ম ও অবদান তার আমলনামায় যোগ হতে থাকবে, সেগুলো হলো-

১. ইলম: যা সে শিক্ষা করেছে এবং মানুষের মাঝে প্রচার-প্রসার ও বিস্তার করে গেছে। ২. নেক সন্তান: যাকে সে দুনিয়ার রেখে গেছে। ৩. কুরআন: যা মীরাস রূপে সে রেখে গেছে। ৪. মসজিদ: যা সে নির্মাণ করে গেছে। ৫. মুসাফির খানা: যা সে পথিক-মুসাফিরদের জন্য তৈরি করে গেছে। ৬. খাল, কুয়া, পুকুর প্রভৃতি: যা সে খনন করে গেছে। ৭. দান: যা সে সুস্থ ও জীবিত অবস্থায় তার মাল হতে করে গেছে। (এগুলোর সওয়াব) মৃত্যুর পরও তার নিকট পৌঁছতে থাকবে’।