নতুন জুতায় পায়ে ফোস্কা পড়লে যা করণীয়

1613

নতুন জুতায় পায়ে ফোস্কা পড়লে- জুতা শুধুমাত্র ফ্যাশানের অনুষঙ্গ নয়, পায়ের সুরক্ষা ও ময়লা থেকে পা-কে নিরাপদ রাখতে জুতা ছাড়া কোন বিকল্পই নেই। নতুন জুতা শুধু যে আমরা উৎসব পার্বনে কিনি বিষয়টা মোটেও তা নয়।

যে কোন দরকারেই জুতা কেনার প্রয়োজন হতে পারে। ধরুন আপনি চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতে যাচ্ছেন, পুরাতন জুতা রেখে আনকোরা নতুন জুতো জোড়া পড়ে গেলেন।

কিন্তু কিচ্ছুক্ষণ পরেই অনুভব করলেন যে আপনি ভুল করে ফেলেছেন। পায়ে জ্বালাপোড়া হচ্ছে, নতুন জুতার কারণে আপনার পায়ে ফোস্কা পড়ে গেছে।

অনেক সময় নতুন জুতা পরে ঘণ্টা খানেক হাঁটা-চলা করার পর গোড়ালির পিছন দিকে, আঙুলের পাশে কিংবা বুড়ো আঙুলের তলায় ফোস্কা পড়তে দেখা যায়। একবার ফোস্কা পড়লে পরবর্তী ২-৩ দিন হাঁটা চলা করাটাই মুশকিল হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় কয়েকটি উপায়ে দ্রুত ফোস্কা সারিয়ে তোলা সম্ভব।

স্পঞ্জঃ

জুতার যে জায়গাগুলো খুব শক্ত, পায়ে ঘষা লেগে ফোস্কা পড়তে পারে, সেই জায়গাগুলোতে টেপ দিয়ে স্পঞ্জ লাগিয়ে নিলে পায়ে ফোস্কা পড়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।

নারিকেল তেলঃ

জুতা স্যান্ডেল থেকে পায়ে পরা ফোস্কা সারাতে সব থেকে ভালো উপাদান হলো নারিকেল তেল। এক চা চামচ কর্পূর এর সাথে সামান্য নারিকেল তেল মিশিয়ে পায়ের ফোস্কা পড়া জায়গাতে লাগাতে হবে।

দিনে দুইবার এটি লাগালে তাড়াতাড়ি ফোস্কা সেরে যাবে এবং একই সাথে এটি আক্রান্ত জায়গার চুল্কানিও কমিয়ে দেবে। জুতা পরার আগেও নারিকেল তেল লাগিয়ে নিলে পায়ে ফোস্কা পরবে না।

ভেসলিনঃ

জুতার চামড়ার যে জায়গাগুলো খুব শক্ত, পায়ে ঘষা লেগে ফোস্কা পড়তে পারে, সেখানে ভেসলিন লাগিয়ে নিলে জুতোর ওই জায়গাগুলো কিছুটা নরম হয়ে যাবে। এত ফোস্কা পড়ার ঝুঁকিও কমবে।

লবনঃ

ঠান্ডা পানিতে লবণ দিয়ে ফোস্কা পড়া জায়গা ভিজিয়ে রাখতে হবে ১৫-২০ মিনিট। এর ফলে জ্বালাপোড়া কমবে এবং ফোস্কার ফুলে উঠা অনেকাংশে কমে যাবে।

মধুঃ

মধু হচ্ছে পায়ের ফোস্কা সারিয়ে তুলতে আরেকটি উপকারী প্রাকৃতিক উপাদান। পায়ের ফোস্কা পরা জায়গাটাতে দিনে তিনবার খাঁটি মধু লাগালে পায়ের ফোস্কা দ্রুত শুকিয়ে যায়। মধুর উপাদান সমূহ পায়ের ক্ষত দ্রুত শুকানো সহ যেকোন সংক্রামন থেকে রক্ষা করে।

টুথপেস্টঃ

পায়ে ফোস্কা পড়া স্থানে যতো দ্রুত সম্ভব টুথপেস্ট লাগাতে হবে। এর ফলে ফুলে উঠা এবং ফোস্কার ভেতরের পানি খুব সহজেই কমে যাবে এবং এতে জ্বালাপোড়াও কমে আসবে অনেক।

ডিমঃ

ফোস্কা পড়া স্থানে দ্রুত ডিমের সাদা অংশ লাগিয়ে নিলে ফোস্কার সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কখনও কখনও দ্রুত ডিমের ব্যবহারে চামড়ায় ফোস্কাই পড়ে না।

চালের আটাঃ

জুতা থেকে পায়ে পরা ফোস্কার দাগ তুলতে সাহায্য করে চালের আটা। দুই থেকে তিন টেবিল চামচ চালের আটার সাথে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে ফোস্কা শুকানো উঠা জায়গাটায় পেস্টটি লাগিয়ে রাখতে হবে যতক্ষন না শুকিয়ে যায় এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে জায়গাটি ধুয়ে ফেলতে হবে।

গ্রিন টিঃ

গ্রিন টির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান খুব দ্রুত ফোলা কমাতে এবং জ্বালা বন্ধ করতে সাহায্য করে করে।

অ্যালোভেরা জেলঃ

অ্যালোভেরা জেল লাগালে তা ফোস্কা পড়ার জ্বালা পোড়া থেকে মুক্তি দেবে। সরাসরি অ্যালোভেরা কাণ্ড থেকে জেল নিয়ে আক্রান্ত জায়গাতে লাগাতে হবে, এবার শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে ফোস্কার জ্বালা পোড়া কমে যাবে।

বর্ষাকালে পায়ের যত্নে যা করণীয়

এখন বর্ষাকাল। আর বর্ষাকালে বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটে পানি জমে থাকে। একটু বাইরে বের হলেই সেসব নোংরা পানি পায়ে লাগতে পারে।

এসব পানি লেগে পায়ে ফুসকুড়ি, চুলকানির মতো নানা ধরনের চর্মরোগও হতে পারে। তাই সচেতনতা বজায় রেখে বর্ষাকালে পায়ের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা কর্মজীবী, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি বেশি প্রযোজ্য।

বর্ষাকালে পায়ের বিশেষ যত্ন নিতে যা যা করতে হবে:

১) বর্ষায় পায়ের যত্নে প্রতিদিন অন্তত একবার পা ভালো করে ধুতে হবে। পা ধোয়ার ক্ষেত্রে হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। ধোয়ার আগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হালকা গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখতে হবে। পা ভেজানোর পানিতে সামান্য শাওয়ার জেল মিশিয়ে নিতে হবে।

২) বর্ষায় এমন ধরনের ঢাকা জুতো ব্যবহার করতে হবে, যাতে পায়ে একেবারেই পানি না লাগে। কিন্তু এই ধরনের ঢাকা জুতো সারাদিন পরে থাকলে পায়ে ময়েশ্চার জমার সম্ভাবনা থাকে। তাই এই জুতো পরার আগে পায়ের পাতায় ভালো করে অ্যান্টি-পার্সপিরেন্ট স্প্রে করে নেয়া যেতে পারে।

৩) ঘুমাতে যাওয়ার আগে পা পরিষ্কারের জন্য কিছু সময় ব্যয় করা উচিৎ। পরিষ্কারের সময় পায়ের- ত্বকের মৃতকোষ ঘষে দূর করতে হবে। এরপর পা ভালোভাবে শুকিয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান।

৪) পরনের জুতো অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে। তবে পরবর্তীতে পায়ে পরার আগে জুতো জোড়া পর্যাপ্ত বাতাসে শুকিয়ে নিবেন। যারা অফিস করেন তারা একজোড়া এক্সট্রা জুতো ও মোজা রাখার চেষ্টা করবেন। যাতে একজোড়া ভিজে গেলেও কোনো সমস্যা না হয়।

৫) যাদের খুব তাড়াতাড়ি পায়ে ইনফেকশন দেখা দেয় তারা মোজা বা জুতো পরার আগে ফাঙ্গাস রোধক পাউডার দিয়ে নিতে পারেন।

৬) আধা লিটার পানিতে দু’টো টি ব্যাগ দিয়ে ১৫ মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিতে হবে। এ বার এ চায়ের সঙ্গে ২ লিটার ঠাণ্ডা পানি মেশাতে হবে। একটি বড় গামলায় এ চা নিয়ে ২০ মিনিট পা ডুবিয়ে বসে থাকতে হবে। টানা এক সপ্তাহ নিয়মিত করলে পায়ে আর দুর্গন্ধ হবে না।

৭) চায়ের মতোই কাজ করবে মাউথওয়াশ। ৫০০ মিলি লিটার ফুটন্ত পানিতে মাউথওয়াশ মেশাতে হবে। এরপর ২ লিটার ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে পা ডুবিয়ে বসে থাকুতে হবে ২০ মিনিট। দুর্গন্ধ সম্পূর্ণ দূর হয়ে যাবে।

৮) পায়ে গন্ধ হয় নখের কোনে বা আঙুলের ফাঁকে ব্যাকটেরিয়া জমার কারণে। তাই একটি গামলায় অল্প পরিমাণ ভিনিগারের সঙ্গে পানি মিশিয়ে পা ডুবিয়ে রাখতে হবে কিছুক্ষণ। টানা এক সপ্তাহ করলে ভাল ফল পাবেন।

৯) বর্ষার দিনে বাড়ি থেকে বেরনোর আগে পায়ের পাতায় ফুট পাউডার লাগাতে হবে। বিশেষ করে আঙুলের খাঁজে। এর ফলে পা শুকনো থাকবে এবং গন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।