এডিস মশা কখন কামড়ায়, জেনে নিন কী করবেন ?

1521

এডিস মশা কখন কামড়ায়- ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধ করতে হলে এডিস মশার বিস্তার রোধ করতে হবে। এছাড়া এই মশা যেন কামড়াতে না পারে সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধ বিষয়ে নিজের ফেসবুক পরামর্শ দিয়েছেন প্রফেসর ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।

এডিস মশা স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে। এছাড়া মশক নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

এডিস মশা কখন কামড়ায়?

এডিস মশা মূলত দিনের বেলা, সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়, তবে রাত্রে উজ্জ্বল আলোতেও কামড়াতে পারে।

আসুন জেনে নেই এডিস মশার কামড় থেকে বাঁচতে কী করবেন?

১. এডিস মশা মূলত দিনের বেলা কামড়ায়। তাই এ সময় শরীর ভালোভাবে কাপড়ে ঢেকে রাখতে হবে।

২. দিনের বেলা পায়ে মোজা ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩. শিশুদের হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট বা পায়জামা পরাতে হবে।

৪. দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার করতে হবে।

৫. দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে। ৪.স্প্রে, লোশন, ক্রিম, কয়েল, ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।

৫.ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, বাড়িঘরের আশপাশে যে কোনে পাত্রে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করুন।

৬.ঘরের বাথরুমে কোথাও জমানো পানি ৫ দিনের বেশি যেন না থাকে।

৭.বাড়ির ছাদে বাগানের টবে বা পাত্রে যেন পানি জমে না থাকে।

৬.বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার রাখুন।


ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

শরীরে কোন লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝবেন যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় কী হতে পারে? আসুন জেনে নেই ডেঙ্গুজ্বর সম্পর্কে ১০টি গুরুত্বর্পর্ণ তথ্য।

ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো :

সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেবার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। এর সাথে শরীরে ব্যথা মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র‍্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।

জ্বর হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন:

এখন যেহেতু ডেঙ্গুর সময়, সেজন্য জ্বর হল অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বরে আক্রান্ত হলেই সাথে-সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

বিশ্রামে থাকতে হবে:

জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে। জ্বর নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন যেসব পরিশ্রমের কাজ করে, সেগুলো না করাই ভালো। পরিপূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন।”

কী খাবেন:

প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন – ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।

যেসব ঔষধ খাওয়া উচিত নয়:

ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম। কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা নিয়ে চিন্তিত?:

ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা এখন আর মূল ফ্যাক্টর নয় । ”প্ল্যাটিলেট কাউন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কোন প্রয়োজন নেই। বিষয়টি চিকিৎসকের উপর ছেড়ে দেয়াই ভালো।” সাধারণত একজন মানুষের রক্তে প্ল্যাটিলেট কাউন্ট থাকে দেড়-লাখ থেকে সাড়ে চার-লাখ পর্যন্ত।

ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়?:

ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে। এ ভাগগুলো হচ্ছে – ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা নরমাল থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির।

তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার কোন প্রয়োজন নেই। ‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না। অনেক সময় দেখা যায়, দুইদিন জ্বরের পরে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়।

এক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হওয়াই ভালো। ‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ’র প্রয়োজন হতে পারে।

ডেঙ্গুর জ্বরের সময়কাল:

সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ এ সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল আরো এগিয়ে এসেছে। এখন জুন মাস থেকেই ডেঙ্গুজ্বরের সময় শুরু হয়ে যাচ্ছে।

এডিস মশা কখন কামড়ায়:

ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে উঠে। এডিস মশা কখনো অন্ধকারে কামড়ায় না।

পানি জমিয়ে না রাখা:

এডিস মশা ‘ভদ্র মশা’ হিসেবে পরিচিত। এসব মশা সুন্দর-সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে। এডিস মশা সাধারণত ডিম পাড়ে স্বচ্ছ পানিতে। কোথাও যাতে পানি তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি জমা না থাকে। এ পানি যে কোন জায়গায় জমতে পারে।

বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন পয়েন্টে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা টায়ার কিংবা অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা।