আমাজনে বাঙালি তরুণী- অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় এই বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ফিল্মমেকার বাঙালি তরুণী. ইকুয়েডরের ঘন জঙ্গলে শুটিং করতে গিয়ে বিয়ে করলেন এক আদিবাসী সর্দারকে।
ছোট্ট কুটিরে হই হই করে আদিবাসীরা বিয়ে দিলেন সারা-গিংকটোর। রীতি মেনে শরীর অ’না’বৃ’ত করে শুরু হয় বিয়ের মন্ত্রোচ্চারণ।
রাতভর চলে নাচ-গান। বীর যো”দ্ধা গিংকটোকে বিয়ে করে সারা এখন আমাজন জঙ্গলের রানি। তাঁকে পরিয়ে দেওয়া হয়েছে ম্যাকাও পাখির পালক দিয়ে তৈরি মুকুট। কোমরে বাঁধা পাখির পালকের ক্ষুদ্র পোশাক।
শিক্ষিতা, আধুনিকা সারা কিভাবে আদিবাসীদের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মিশতে পারলেন? সারা জানিয়েছেন, আদিবাসীদের জীবনযাত্রাকে ক্যামেরাবন্দি করার জন্য তাঁদের আস্থা অর্জন করা ভীষণ দরকার ছিল।
কিন্তু বিয়ে না করলে তাঁদের মন জেতা সহজ ছিল না। তাই বয়সে ৩০ বছরের বড় হলেও গিংকটোকে বিয়ে করতে দু’বার ভাবেননি সারা।
অ’না’বৃ’ত শরীরে বিবাহ অনুষ্ঠান হবে শুনে চমকে গিয়েছিলেন। সারার কথায়, গ্রামের সব পুরুষ-মহিলা কোনো পোশাক না পরে আমাদের বিয়ে দেখতে এসেছিল। এটাই ওদের রেওয়াজ। এক মহিলা যখন আমাকে নিরাবরণ করে দিল তখন মনে হচ্ছিল এক দৌড়ে ওখান থেকে পালিয়ে আসি। এই সব রেকর্ড হবে ভেবেই অস্বস্তি হচ্ছিল।
কিন্তু ওরা মনের দিক থেকে অনেক স্বচ্ছ। গিংকটোকে বিয়ে করলে তবেই সারাকে ইকুয়েডরের ওই জঙ্গলে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানান এক প্রবীণ আদিবাসী।
অবশ্য ‘ম্যানলি চেহারার গিংকটোর সঙ্গে ভাব হতে দেরি হয়নি সারার। শা রী রি ক সম্পর্কের জন্য নয়, শুধুমাত্র এদের চিনতে, জানতেই বিয়ে করেছি গিংকটোকে, জানিয়েছেন সারা।
প্রায় তিন হাজার আদিবাসীর বাস আমাজনের এই জঙ্গলে। সভ্য মানুষ দেখলেই তাঁদের ধারালো অস্ত্র” দিয়ে হ”ত্যা করে তারা।
এমন পরিস্থিতিতে আদিবাসীদের পরিবারের একজন হওয়ার সাহস দেখিয়ে নজির গড়েছেন সারা। সারাকে কখনো কেউ আ’ক্র’ম’ণ করেননি। ওদের ভাষা বুঝতে পারতাম না। গিংকটো অল্প স্প্যানিশ বলতে পারে। আমার ক্যামেরাম্যান স্প্যানিশ জানত। ওর সাহায্যেই গিংকটোর সঙ্গে গল্প করতাম।
আমার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার খুব ইচ্ছা রয়েছে গিংকটোর। কিন্তু জঙ্গল ছেড়ে কিছুতেই বেরতে চায় না ও বললেন সারা বেগম। তাঁর জঙ্গল জীবনের কাহিনি নিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন তথ্যচিত্র।
শিগগিরই তা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন সারা। গিংকটো ও জঙ্গলের জন্য মাঝে মাঝেই মন কেমন করে তাঁর। সারা জানালেন, ফুরসত মিললেই স্বামীর কাছে ফিরে যাবেন।
উল্লেখ্য, ১৪ বছর বয়সে একবার দাদা-দাদীর সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে এসে ছিলেন সারাহ। দুই সপ্তাহের সেই সফর শেষমেষ ১৬ মাসে গিয়ে ঠেকেছিল। প্রকৃতিপ্রেমী এই তরুণী মজেছিলেন বাংলাদেশের প্রকৃতিতে।প্রকৃতির প্রতি সেই টানেই ছুটে গিয়েছিলেন আমাজানের গহীন জঙ্গলেও, পাঁচ বছর আগে লন্ডন থেকে দুই সপ্তাহের জন্য উড়ে গিয়েছিলেন তিনি।
ডেইলি মিরর লিখেছে, তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য হুয়ারোনিদের বিশ্বাস অর্জনের প্রয়োজনেই সারাহ সেখানে বিয়ে করেছিলেন ওই গোত্রের সেরা শি’কা’রী হিসাবে পরিচিত গিংটোকে, যার বয়স সারাহর দ্বিগুণের বেশি।
সারাহ জানান, এর আগে তাকে বিয়ের যোগ্যতাও অর্জন করতে হয়েছে। শিখতে হয়েছে কিভাবে বড় বড় ঘাস বুনতে হয় আর ব্লোপাইপ থেকে বি’ষা’ক্ত তীর ছুড়ে শি’কা’র করতে হয়। হুয়ারোনি গোত্রের ‘বউ’ হওয়ার ঘটনাটিও যে মজার ছিল, তাও উঠে আসে এই তথ্যচিত্র নির্মাতার বর্ণনায়।
‘আমাকে বয়স্করা বেশ পছন্দ করেছিল। কিন্তু কী ঘটতে যাচ্ছে, সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। আমাকে একটা কুঁড়েঘরে ডেকে নেওয়া হয়, সেখানে যারা ছিল, তারা সবাই ন.. গ্ন ছিল।’
‘আমাকে বলা হল, তাদের মতো করে কাপড় পরতে হবে, যা এক টুকরো গাছের ছাল দিয়ে তৈরি এবং শুধু কোমরে পেঁচিয়ে রাখা হয়।’ সারা জানিয়েছেন তাঁর উদ্দেশ্য ছিল কীভাবে এই আদিবাসীরা বেঁচে আছেন সেটাই তিনি বহির্বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরতে চেয়ে ছিলেন তাঁর ডকুমেন্টারির মাধ্যমে। আর সেটা তিনি করেওছেন। গত বছর কানে সারার ডকুমেন্টারি দেখানো হয়েছে।