শয়তান যে ৩ কাজে মানুষকে সবচেয়ে বেশি ধোঁকা দেয়

1516

‘শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন’- এটি মহান আল্লাহ তাআলার ঘোষণা। আল্লাহর কাছ থেকেই শয়তান মানুষের ক্ষতি করবে বলে তার শিরা-উপশিরায় প্রবেশের ক্ষমতা নিয়ে এসেছে।

শয়তান যে সব অবস্থায় মানুষের বেশি ক্ষতি করে সে সম্পর্কে প্রখ্যাত ফকিহ হজরত আবু লাইছ সমরকান্দি রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘তাম্বিহুল গাফেলিন’-এ একটি ঘটনাসহ তা তুলে ধরেছেন। আর তাহলো-

শয়তান একদিন হজরত মুসা আলাইহিস সালামের কাছে এসে বললো, ‘আপনি আল্লাহর মনোনীত রাসুল। আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার মর্যাদাও আপনি লাভ করেছেন। আমি তাওবা করার ইচ্ছা করছি। আমার তাওবা কবুলের জন্য আপনি আল্লাহর কাছে সুপারিশ করুন।’

শয়তানের তাওবা করার কথা শুনে হজরত মুসা আলাইসি সালাম খুশি হয়ে গেলেন। কারণ শয়তান তাওবা করলেই গোনাহ সংঘটিত হবে না। তাই তিনি ওজু করে নামাজে মনোযোগ দিলেন।

তখন আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে জানান, ‘হে মুসা! শয়তান তোমার সঙ্গে মিথ্যা বলেছে। সে তোমার সঙ্গে প্রতারণা করতে চেয়েছে।’

যদি তাকে পরীক্ষা করতে চান, তবে তাকে এ কথা বলে দেখুন যে, সে যেন হজরত আদম আলাইহিস সালামের কবরে সেজদা করে। যদি সে হজরত আদমের কবর সেজদা করতে রাজি হয় তবে আমি তার তাওবা কবুল করব।

হজরত মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর এ সংবাদে খুব খুশি হলেন। খুশি হওয়ার কারণ হলো এটা একটা সাধারণ শর্ত। শয়তান এটা সহজেই কবুল করে নেবে। তাই তিনি শয়তানকে আল্লাহর এ খবর পৌঁছে দিলেন।

শয়তান আল্লাহর এ সংবাদ শোনার সঙ্গে সঙ্গে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেল। বলল, ‘(হজরত) আদমকে জীবিত থাকতেই তো সেজদা করিনি এখন তার মৃ ত্যুর পর তাকে সেজদা করব?’

অতঃপর শয়তান হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে বলল, আপনি যেহেতু আমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে আমার প্রতি দয়া করেছেন। তাই আমি তিনটি বিষয়ের ব্যাপারে আপনাকে সতর্ক থাকতে বলছি। যে সব অবস্থায় আমি মানুষের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ধোঁকা দিয়ে থাকি।

যে তিন সময় শয়তান মানুষকে বেশি ধোঁকা দেয়-

– মানুষ যখন রেগে যায়, তখন তাকে আরও বেশি বিপদগ্রস্ত আমি তার অন্তরে অবস্থান করি আর রক্তের সঙ্গে তার শিরা-উপশিরায় দৌড়াতে থাকি।

– মুজাহিদ যখন জিহাদের ময়দানে উপস্থিত হয় কিংবা যুদ্ধ করে, তখন আমি তার অন্তরে স্ত্রী, সন্তান ও সম্পদের আকর্ষণ বাড়াতে থাকি। যাতে সে স্ত্রী, সন্তান ও সম্পদের আকর্ষণে জিহাদ থেকে পলায়ন করে। এক্ষেত্রে একটি কথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, ইসলামের যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা জিদের মতোই কষ্টের, শয়তান সে বিষয়গুলোতেও বেশি ধোঁকা দিয়ে থাকে।

– মানুষ যখন গায়রে মাহরাম নারীর সঙ্গে একাকি থাকে। তখন আমি তাদের উভয়ের সঙ্গে অবস্থান করে তাদের একের প্রতি অপরকে ঝুঁকিয়ে দেয়া সর্বাত্মক চেষ্টা করি। যতক্ষণ না তারা অসৎ কাজে জড়িয়ে না পড়ে। অসৎ কাজ সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত এ প্রচেষ্টা চলতে থাকে।

সুতরাং মানুষের উচিত উল্লেখিত তিন অবস্থায় শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকা। রাগের সময় ধৈর্য ধারণ করে চুপ থাকা। প্রয়োজনে মাটিতে শুয়ে পড়া। জিহাদসহ ইসলামের কঠিন বিধান পালনকালে ঈমানের সর্বোচ্চ পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়া। যে সব নারীর সঙ্গে দেখা করা বৈধ নয়, তাদের সঙ্গে একাকি অবস্থান না করা।

সব সময় শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর কাছে সাহায্য ও রহমত কামনা করা। বিশেষ করে বেশি বেশি তাওবা ও ইসতেগফার পড়া। যাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়।

– সব সময় ইসতেগফার পড়া

উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি; রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত তাওয়্যাবুল গাফুর।

আর সকালে এবং সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া-

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিং শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিজান্মি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত অবস্থায় শয়তানের ধোঁকা থেকে নিজেদের হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। ইসলামের বিধানসমূহ যথাযথ পালনের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত কামনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।