২০৩০ সালে রোজা হবে ৩৬ দিন !

1292

২০৩০ সালে রোজা হবে ৩৬ দিন- আরবি মাসগুলো ২৯ কিংবা ৩০ দিনে হয়ে থাকে। রমজান এর বাইরে নয়।

তবে কি ২০৩০ সালের রমজান মাস ৩৬ হয়ে যাবে! ‘না’, রমজান মাস ঠিকই থাকবে। বরং বছরের শুরু ও শেষে রমজান অনুষ্ঠিত হবে।

আর তাতে মুমিন মুসলমান একই বছর ৩৬ দিন রোজা পালন করবে। এমনটি জানিয়েছেন সৌদি আরবের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগরে জলবায়ুর অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল-মুসনাদ।

সৌদি আরবের আল-কাসিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের জলবায়ুর অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল-মুসনাদ বলেছেন, এমন ঘটনা বার বার পুনরাবৃত্তি হয় না। মুসলমানরা ২০৩০ সালে ৩৬ দিন রোজা রাখবে।

তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘২০৩০ সালের ৫ জানুয়ারি মোতাবেক ১৪৫১ হিজরির পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে। আর আশা করা যায় এ মাসটি ৩০দিন পূর্ণ হবে।

আবার একই বছর ২৬ ডিসেম্বর মোতাবেক ১৪৫২ হিজরির পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে। আর তাতে ডিসেম্বরে মুমিন মুসলমান ৬ দিন রোজা পালন করবে। সে হিসেবে ২০৩০ সালের ৩৬৫ দিনে মুসলিম উম্মাহ ৩৬ দিন রোজা পালন করবে।‘

এমনটি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে এ অধ্যাপক বলেন, চন্দ্র বছর আর সৌরবর্ষের মধ্যে প্রতি বছর ১১ দিন ব্যবধান হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য চন্দ্র বছরের মাসগুলো ২৯ কিংবা ৩০ দিন হয়ে থাকে। আর সৌরবর্ষের মাসগুলো ৩০ ও ৩১ দিনে নির্ধারিত। সে কারণে বছর শেষে চন্দ্র বছর ১১ দিন কমে যায়। আর এভাবে ২০৩০ সালে পবিত্র রমজান মাসের শুরু হবে দুই বার।

হে আল্লাহ! আমাদের গোনাহ ক্ষমা করুন….

মাগফেরাতের মাস রমজান। এ মাসের রোজা পালনে মানুষ ক্ষমা লাভ করে। রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহর ভয় অর্জন করতে সক্ষম হয়। আর আল্লাহর ভয় মানুষকে নিষ্পাপ গোনাহমুক্ত জীবন লাভে সহায়তা করে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা রমজানের সিয়াম সাধনার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য (রমজানের) রোজা ফরজ করা হয়েছে। অনুরূপ তোমাদের আগের লোকদের ওপরই ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

আল্লাহর ভয় অর্জন করার অর্থই হলো ইসলামের বিধি-বিধানগুলো যথাযথ আদায় করা। যখনই ইসলামের বিধানগুলো যথাযথ পালিত হবে তখনই মানুষ আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভ করবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও রমজানের সিয়াম সাধনায় গোনাহ মাফের সুসংবাদ দিয়েছেন। পরিপূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় যদি রমজান মাসের ফরজ রোজা পালন করে তবে তার আগের সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা পালন করে, তার আগের সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’ (বুখারি ও মুসলিম)

অনেকেই গোনাহ মাফ বলতে ছোট ছোট গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া বিষয়টি বুঝিয়েছেন। কিন্তু এ সম্পর্কে হজরত ইবনু হাজার আল-আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- ‘হাদিসের বাহ্যিক অর্থ সগিরা-কবিরা তথা ছোট-বড় সব গোনাহকেই অন্তর্ভূক্ত করে। তাঁর এ মতকে অনেকেই সমর্থন করেন।’

তবে অনেকে বলেছেন কারো আমলনামায় সগিরা গোনাহ না থাকে আর যদি কবিরা গোনাহ থাকে তবে আল্লাহ ওই ব্যক্তির বড় গোনাহগুলো হালকা করে দেন।’ (ফতহুল বারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত একান্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা পালন করা। গোনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়া। তবেই আল্লাহ বান্দার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।

রমজানের রোজা পালনের সঙ্গে সঙ্গে গোনাহ মাফের ছোট ছোট আবেদনগুলো করা। যা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে উল্লেখ করেছেন-

উচ্চারণ- ‘রাব্বিগফিরলি, ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত তাওয়াবুল গাফুর।’

অর্থ : পরওয়াদেগার! তুমি আমাকে মাফ কর এবং আমার তাওবা কবুল কর। কেননা তুমি হলে তাওবা কবুলকারী এবং ক্ষমাকারী। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও মিশকাত)

অতপর হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালাম-এর ঐতিহাসিক ক্ষমা লাভের দোয়াটি বেশি বেশি পড়া-

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’

অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি  অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২৩)

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাকে ভালোবাসেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে হেদায়েত চাই, আপনার ভয় চাই, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি চাই, সচ্ছলতা কামনা করি।’

পবিত্র রমজান মাসে মুমিন বান্দা তাদের গোনাহ থেকে ক্ষমা লাভ করতে পারলেই বছরের বাকি এগারোটি মাস এ সিয়াম সাধনার ফল ভোগ করবে। সে জন্য বেশি বেশি তাওবাহ করা জরুরি।

হে আল্লাহ! আপনি মুমিন মুসলমানের রোজাদারের গোনাহগুলো ক্ষমা করে দিন। দুনিয়ার যাবতীয় বিপর্যয়, মহামারি রোগ-ব্যধি, বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা করুন। রমজানের রহমত বরকত মাগফেরাত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।