যে দোয়া পাঠ করলে দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে

9347

দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে- যে দোআটি আমল করার দ্বারা সব ধরনের দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উপর্যুক্ত দোয়াটি শিখিয়ে দেন এবং তা সকাল সন্ধ্যায় পড়তে বলেন।

আবু উমামা বলেন আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দোয়াটি পড়তে লাগলাম ফলে আল্লাহ তায়ালা আমার চিন্তা দূর করে দিলেন এবং আমার ঋণগুলোও আদায় করে দিলেন। [আবু দাউদ-১৫৫৭ হায়াতুস সাহাবা-৭২৪]

ফজিলত: হজরত আবু সাঈদ খুদরি [রা.] বলেন; একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রাসুল তাকে বললেন, আবু উমামা!

ব্যাপার কী, নামাজের সময় ছাড়াও তোমাকে মসজিদে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে? আবু উমামা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ!

অনেক ঋণ এবং দুনিয়ার চিন্তা আমাকে গ্রাস করে রেখেছে। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালিমা শিখিয়ে দেব, যেগুলো বললে আল্লাহ তায়ালা তোমার চিন্তাকে দূর করে দেবেন এবং তোমার ঋণগুলো আদায় করে দেবেন।

তিনি বলেন, জি হ্যাঁ ইয়া রাসুলাল্লাহ! অবশ্যই বলুন, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উপর্যুক্ত দোয়াটি শিখিয়ে দেন এবং তা সকাল সন্ধ্যায় পড়তে বলেন।

আবু উমামা বলেন আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দোয়াটি পড়তে লাগলাম ফলে আল্লাহ তায়ালা আমার চিন্তা দূর করে দিলেন এবং আমার ঋণগুলোও আদায় করে দিলেন। [আবু দাউদ-১৫৫৭ হায়াতুস সাহাবা-৭২৪] আরবি দোয়া (একবার পাঠ করতে হবে)

اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ.

বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুজনি ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজাঝি ওয়াল কাসালি ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবুনি ওয়াল বুখুলি ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিত দিনি ওয়া কাহরির রিজালি।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি যাবতীয় চিন্তা ও পেরেশানি থেকে। তোমার আশ্রয় প্রার্থণা করছি সবধরণের অক্ষমতা ও অলসতা থেকে। আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি কাপুরুষতা ও কৃপনতা থেকে। আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি অত্যাধিক ঋণ ও মানুষের ক্রোধ থেকে।

কেয়ামতের দিন সফলকাম হবে যে আমল দ্বারা

রাসুল (সা.)-এর হাদিস থেকে যেটা আমরা বুঝতে পেরেছি সেটা হল, মিজানের মধ্যে সবচেয়ে ভারী যে আমলটি হবে, সেটা হলো উত্তম চরিত্র। উত্তম চরিত্রটা মিজানের বা পাল্লার মধ্যে সবচেয়ে ভারী আমল হবে এবং এর মাধ্যমে বান্দারা সবচেয়ে বেশি সফলতা লাভ করতে পারবে।

এটা রাসুল (সা.) সমস্ত আমলের মধ্যে কমন নির্দেশনা দিয়েছেন। রাসুল (সা.) কোথাও কোথাও কিছু সুনির্দিষ্ট আমলকে কেয়ামতের দিন নাজাতের জন্য অথবা সফলতার জন্য মানদণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, কিন্তু সেটা কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে। বাকি কমন যে নির্দেশনা সেটা হচ্ছে, উত্তম চরিত্র।

এটা হলো এমন নেক আমল, যে নেক আমলের মাধ্যমে বান্দারা কেয়ামতের দিন মিজানের মধ্যে ভারী নেক আমল হিসেবে পাবে। কিছু সুনির্দিষ্ট আমলকে মর্যাদাপূর্ণ আমল হিসেবে রাসুল (সা.) আখ্যায়িত করেছেন। যেমন, সিয়াম। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তুমি সিয়াম পালন করো।’ এটা রাসুল (সা.) এমনভাবে বলেছেন যে এর সমতুল্য কোনো আমলই নেই।

যেমন, রাসুল (সা.) যখন কোরআনের কথা উল্লেখ করেছেন, তখন রাসুল (সা.) স্পষ্ট করেছেন, ‘কোরআন তোমার পক্ষে থাকবে অথবা তোমার বিপক্ষে দাঁড়াবে।’ যারা কোরআন তিলাওয়াত করেছে, কেয়ামতের দিন কোরআন তাদের জন্য সুপারিশ করবে। তাহলে বোঝা গেল যে, কোনো প্রেক্ষাপটে রাসুল (সা.) কিছু কিছু নেক আমলকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

কিন্তু কমন যে নেক আমল মিজানের বা পাল্লার মধ্যে সবচেয়ে ভারী আমল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সেটা হচ্ছে, উত্তম চরিত্র। রাসূল (সা.) সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন-‘নিশ্চয়ই আপনি উত্তম নৈতিক চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত’। (আল-ক্বালাম: ৮)

কথাবার্তা ও মৌখিক আচরণে একজন মু’মিনকে কিভাবে শালীন হতে হবে সে ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন-‘মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথাবার্তা বলো।’ (বাকারা: ৮৩)

নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন-‘তোমার ভাইয়ের সাথে মুচকি হাসির বিনিময় করাও সাদকার সওয়াব হয়ে যায়’। (তিরমিযী)। অনেক হাদীসে নবী করীম (সা.) উন্নত নৈতিক চরিত্র অর্জন এবং খারাপ চরিত্র বর্জনের জন্য উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন।

ঈমানের উচ্চ আসনে আসীন হওয়ার জন্য উন্নত নৈতিক চরিত্র ও আচার ব্যবহারের ন্যায় আর কোন আমল নেই। তিনি এরশাদ করেন-‘সবচেয়ে ঈমানদার হচ্ছে ঐ লোক যার চরিত্র সর্বোত্তম। আর তোমাদের মধ্যে সে লোক সর্বোত্তম যে তাদের স্ত্রী-পরিবারের প্রতি উত্তম আচরণে অভ্যস্ত’। (আহমদ/তিরমিযী)

রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো কোন আমল মানুষকে বেশি বেশি করে জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন-‘আল্লাহ ভীতি ও উত্তম চরিত্র’। আবার তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো-কোন আমল মানুষকে বেশি বেশি করে জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন-‘মুখ (বচন) ও গোপন অঙ্গ (যিনা/ব্যভিচার)’। (তিরমিযী)