যে গাছের পাতা খেলে গলে বেরিয়ে যাবে কিডনির পাথর

4205

তুলসী আমাদের সবার পরিচিত একটি ঔষধিগাছ। এ গাছের পাতায় বহু রোগ সারানোর উপকারি গুণ রয়েছে। তুলসী পাতার রস বা চা প্রতিদিন একগ্লাস করে পান করলে, আমাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার আশংকা কমে যায়।

আর যদি কিডনিতে পাথর জমে তাহলে তুলসী পাতার রস টানা ৬ মাস পান করলে সেই পাথর গলে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।এছাড়া সর্দি, কাশি, কৃমি, প্রস্রাবে জ্বালা কমায়, হজমকারক ও কফ গলাতে দারুন কাজ করে তুলসী পাতা।

এটি ক্ষত সারাতে এন্টিসেপটিক হিসেবেও কাজ করে।তুলসিপাতা দিয়ে চা ও মিশ্রণ তৈরির কয়েকটি প্রস্তুত প্রণালী নিম্নে দেয়া হলো :

তুলসী পানি। উপকরণ : দুই কাপ পানি ও কয়েকটি পাতা।
প্রস্তুত প্রণালী : একটি পাত্রে দুই কাপ পানি নিন। এর সঙ্গে কয়েকটি তুলসিপাতা সিদ্ধ করুন। ফুটে উঠলে নামিয়ে পান করতে পারেন। এই মিশ্রণটি গলা ব্যথা ও খুসখুসে কাশি কমিয়ে আপনাকে আরাম দেবে।

তুলসী-চা

উপকরণ : ১০-১৫টি তুলসীপাতা, গুড়, পানি ও লেবুর রস।


প্রস্তুত প্রণালী : প্রথমে গুড় ও তুলসীপাতা বেটে নিন। এর মধ্যে দেড় কাপ পানি ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে চুলায় বসান। মিশ্রণটি ফুটে উঠলে নামিয়ে ফেলুন। এই চা পান করলে আপনার শরীর উষ্ণ থাকবে।

উপকরণ : এক টুকরো আদা, গোলমরিচ, লবঙ্গ, তুলসীপাতা, দারুচিনি, এলাচ পরিমাণ মতো।


প্রস্তুত প্রণালী : পরিমাণমতো পানিতে উপরের উপকরণগুলো মিশিয়ে জ্বাল দিন।১০ মিনিট পর নামিয়ে ছেকে পান করতে পারেন। এই ভেষজ তুলসী-চা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া রোগ থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা রাখে।

হার্বাল জুস

উপকরণ : আজওয়াইন, তুলসীপাতা, জিরা, আমচুর গুঁড়া, লবণ এবং পুদিনা পাতা পরিমাণ মতো।
প্রস্তুত প্রণালী : চার কাপ পানিতে উপরের উপকরণগুলো মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট জ্বাল দিন। এরপর পান করুন। এই জুস প্রতিদিন পান করেল হজমশক্তি বাড়বে এবং পানিশূন্যতা থেকেও আপনাকে রক্ষা করবে।

এছাড়া বিভিন্ন রোগে তুলসী পাতার ব্যবহার

শক্তিহীনতা : তুলসী পাতা বেঁটে ১০ গ্রামের বড়ি বানিয়ে দৈনিক ১/২ বার খেলে দুর্বল ব্যক্তি শরীরে শক্তি ফিরে পাবেন।

আমবাত বা এলার্জী : তুলসী পাতার রসের সঙ্গে সমপরিমাণের কাঁচা হলুদের রস এবং দুর্বাঘাসের রস মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

দাদ : কালো তুলসী পাতা বেঁটে অল্প সেবন দিয়ে ঘা জায়গায় ভালো করে চুলকিয়ে দিনে ২/৩ বার লাগালে দাদ কমে যায়।

কাশি : এক চামচ আদার রস সমপরিমাণ তুলসীর রস এবং মধু খেলে দীর্ঘস্থায়ী কাশি কমে যায়।

বহুমুত্র : তুলসী, বেলপাতা এবং নিমপাতা সমপরিমাণে বেঁটে লাড্ডু বানিয়ে শুকিয়ে রেখে দিতে হয়। দিনে ২/৩ বার এ বড়ি খেলে বহুমুত্র রোগ ধীরে ধীরে উপশম হয়।

অজীর্ণ : বদহজম বা অজীর্ণ রোগে তুলসী পাতা অপরিহার্য। কয়েকটি তুলসী পাতা বেঁটে ৩/৪টি গোলমরিচ গুঁড়ো করে খেলে বদহজম দূর হয়।

সাদা দাগ : তুলসী পাতার রস কাঁচা হলুদের রসের সঙ্গে সামান্য দুধ মিশিয়ে দিনে ৩/৪ বার লাগালে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাদা দাগ দূর হয়।

খাদ্যে বিষক্রিয়া : খাদ্যে বিষক্রিয়া হলে কিংবা বিষ খেয়ে ফেললে রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তুলসীর রস খাওয়ালে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যায়।

অন্ডকোষ টনটন করলে : তুলসী পাতার রস ছোট চামচের ৫ চামচের সাথে চামচ মিছরি মিশিয়ে রোজ ৩/৪ বার খেলে ব্যথা কমে যায়।

মুখে কালো দাগ : কালো তুলসীর রসের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে ৭/৮ দিন ২/৩ বার লাগালে কালো দাগ উঠে যায়।

কান পাকা : তুলসী পাতার রস সামান্য গরম করে কানে দিলে কানপাকা ভালো হয়।

চুল পড়া : তুলসী পাতার রস এবং আমলকী বেঁটে আধা ঘণ্টা মাথায় রাখলে চুলপড়া বন্ধ হয়।

অতিরিক্ত বমি হলে : ঘন ঘন বমি হলে তুলসীর রস এবং মধু সমপরিমাণে মিশিয়ে খেলে শীঘ্রই বমি বন্ধ হয়ে যায়।

চোখ উঠলে : তুলসী পাতার রস দিনে ৩/৪ বার ব্যবহার করলে চোখের যন্ত্রণা কমে যায়।

হাঁপানি : আদার রসের সঙ্গে সমপরিমাণে মধু এবং কালো তুলসীর রস সকাল-বিকাল ২/৩ চামক করে খেলে কিছুদিনের মধ্যে এ রোগ ভালো হয়।

ম্যালেরিয়া : নিয়মিতভাবে প্রতিদিন সকালে ৫ গ্রাম তুলসীর রস খেলে ধীরে ধীরে ম্যালেরিয়া কমতে সাহায্য করে।

গুটি বসন্ত : এ রোগ আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে তুলসীর রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।

যকৃতের রোগ : যকৃত বৃদ্ধি বা যকৃতে কোনো রোগ হলে তুলসীর পাতা সিদ্ধ করে ঐ পানি ঠান্ডা করে খেলে উপকার হয়।