যেই আদালত চত্বরে চা বিক্রি করেন বাবা, সেই আদালতের জজ হল মেয়ে !

1939

জজ হল মেয়ে- আপনাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করবে এক চা-ওয়ালার জীবনের অজানা গল্প। যে আদালত চত্বরে বাবা চা বিক্রি করেন, সেই আদালতেেই বিচারক হয়েছে তার মেয়ে। সোমবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।

আসুন, আমরা আলাপ করি সুরেন্দর কুমারের সঙ্গে। ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর কোর্ট চত্বরে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি চা বিক্রি করছেন। আজ মেয়েকে নিয়ে তার গর্বের শেষ নেই। বলছিলেন, মেয়ে বড় হয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে, এমন স্বপ্ন আর পাঁচজন বাবার মতো তিনিও দেখেছেন।

কিন্তু, কখনও কল্পনাও করেননি মেয়ে বিচারক হবে। সুরেন্দর কুমার পাঞ্জাবের জলন্ধর কোর্ট এলাকায় পরিচিত মুখ। দীর্ঘদিন ধরে কোর্ট চত্ত্বরে তিনি চা বিক্রি করছেন।

আজ মেয়েকে নিয়ে তাঁর গর্বের শেষ নেই। বলছিলেন, মেয়ে বড় হয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে, এমন স্বপ্ন আর পাঁচজন বাবার মতো তিনিও দেখেছেন। কিন্তু, কখনও কল্পনাও করেননি মেয়ে বিচারক হবে। গর্বিত সুরেন্দর বলে চলেন, আমার ভাই তীর্থ রামের কাছেই ছোটবেলায় মেয়ে পড়াশোনা করেছে।

নানাভাবে মেয়েকে উদ্ধুদ্ধ করেছে রাম। তাই ভাইকেও এর কৃতিত্ব দিতে চান খেটে খাওয়া অতিসাধারণ পরিবারের এই মানুষটি। যাঁকে নিয়ে সুরেন্দরের এই গর্ব, চলুন শুনি সেই শ্রুতির কথা।

এক চান্সেই পাঞ্জাব সিভিল সার্ভিসেস (জুডিশিয়াল) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শ্রুতি জুডিশিয়াল একাডেমিতে একবছরের প্রশিক্ষণ নিয়ে বিচারক। সুরেন্দরের কথায়, মেয়ের এই সাফল্যই আমার জীবনের সেরা পুরস্কার। পাঞ্জাবের ছোট্ট শহর নাকোদর।

সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকেন জলন্ধর কোর্টের এই চাওয়ালা। শ্রুতি স্টেট পাবলিক স্কুল থেকে পাস করে, আইন পড়েন জলন্ধরের GNDU থেকে। এর পর পাতিয়ালার পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে LLM করেছেন।

এর পরধাপে ধাপে বিচারক। দারিদ্র যে লক্ষ্যের পথে কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তা আরও একবার দেখিয়ে দিলেন জলন্ধর কোর্টের এই বিচারক।

পলিথিন পুড়িয়ে পেট্রল উৎপাদন করলেন অটোরিকশা মেকানিক সোহাগ…

পেট্রল উৎপাদন করেছেন ফরিদপুরের কানাইপুরের অটোরিকশা মেকানিক সোহাগ হাওলাদার। উৎপাদিত তেল নিজেদের মোটরসাইকেলে ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। তেল উৎপাদনে যত্রতত্র পড়ে থাকা অব্যবহৃত পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করায় পরিচ্ছন্ন হচ্ছে এলাকার পরিবেশ।

ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে পরিবেশের জন্য প্লাস্টিক ও পলিথিনের ক্ষ’তি’কর প্রভাবমুক্ত হওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। একই সঙ্গে তেল আমদানিতে খরচ হওয়া বৈদেশিক মুদ্রার বড় একটি অংশ বাঁচবে বলেও মন্তব্য তাদের। অনুমোদনসহ সরকারি সহায়তা দেয়া হলে সম্ভাবনাময় এ প্রকল্প ভূমিকা রাখতে পারে জাতীয় অর্থনীতিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল আ’গু’নে পুড়িয়ে অকটেন-পেট্রল উৎপাদন করলেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সনদ নেই সোহাগের। তবে রয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষণ। পলিথিন পুড়িয়ে সেখান থেকে তেল উৎপাদনের ধারণাটি তার কাছে পুরনো।

নিজ বাড়ির আঙিনায় প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে শুরু করেন পলিথিন থেকে তেল উৎপাদনের কাজ। শুরুতে তার এ কার্যক্রম অন্যদের হাসির খোরাক হলেও নিজের উৎপাদিত তেল দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়েছেন।

একটি বড় স্টিলের ড্রামে পলিথিন ঢুকিয়ে ড্রামের মুখ বন্ধ করার পর আ’গু’নের তাপ দেয়া হচ্ছে ড্রামের নিচে। তাপে ভেতরের পলিথিন গলে তৈরি হচ্ছে বাষ্প। সেই বাষ্প পানিতে ডুবিতে রাখা একটি পাইপ দিয়ে চলে যাচ্ছে ছোট দুটি এয়ারটাইড পাত্রে।

সেখানেই বাষ্প থেকে জমছে তেল। এয়ার টাইড ওই দুটি পাত্রের অপর প্রান্তে রয়েছে আরেকটি মুখ খোলা পাইপ। সেখান দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে গ্যাস। এই গ্যাসও সহায়তা করছে আ’গু’ন জ্বালাতে।

সোহাগ বলেন, কাঁচামাল হিসেবে সংগ্রহ হচ্ছে ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া পলিথিন। বিস্কুট, কেক, রুটি এ ধরনের বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর ফেলে দেয়া প্যাকেটসহ পাতলা পলিথিনের বাজারের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে এই কাজে। ক্ষেত্রবিশেষ ভাঙারির দোকান থেকেও কিনতে হয় পলিথিন। আট কেজি পলিথিন থেকে উৎপাদন হয় সাত লিটার পেট্রল। উৎপাদিত পেট্রল ব্যবহার হচ্ছে স্থানীয় অনেকের মোটরসাইকেলে।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক জাহিদুর রহমান বলেন, পচনশীল না হওয়ায় পলিথিন ক্ষতি করছে মাটির। ফসলি জমিতে পলিথিন জমে থাকায় উৎপাদন কমছে ফসলের। ড্রেন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার ফলে সৃষ্টি হয় রোগ জীবাণুর। সোহাগের মতো অন্যরাও যদি এ কাজে এগিয়ে আসে তাহতে কমবে পরিবেশ দূষণকারী পলিথিনের সংখ্যা।

তিনি বলেন, বয়লারে তাপ দেয়ার পর পলিথিন থেকে ডিজে’ল, পেট্রল ও অকটেনসহ তৈরি হওয়া গ্যাস সংরক্ষণ করা গেলে ব্যবহার করা যাবে গৃহস্থালির জ্বালানি কাজে।

কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, সোহাগের উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এতে করে একদিকে যেমন পলিথিনের ক্ষ’তি থেকে বাঁচবে পরিবেশ অন্যদিকে প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের ঘাটতি কিছুটা হলেও কমবে।

তিনি বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সোহাগের মতো এমন উদ্ভাবক ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু তারা মূল্যায়িত হচ্ছে না।

বড় পরিসরে এসব কাজ করতে সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। তাই এসব উদ্ভাবককে সহজে অনুমোদন, বৈজ্ঞানিক পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তা দেয়া হলে সম্ভাবনাময় এ প্রকল্প ভূমিকা রাখবে জাতীয় অর্থনীতিতে।

এর আগে নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভটভটিচালক ইদ্রিস আলী পলিথিন পু’ড়ি’য়ে জ্বালানি তেল ও কালি উৎপাদন করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন।

এরপর পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল আ’গু’নে পুড়িয়ে অকটেন, পেট্রল, ডিজে’ল ও এলপি গ্যাস উৎপাদন করে সাড়া ফেলেছেন রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজে’লার শফিকুল ইসলাম নামে এক যুবক। এবার তাদের দলে যোগ হলেন ফরিদপুরের সোহাগ।