মায়ের দেয়া ৯৪৮ টাকা পুঁজি থেকে এখন কোটি টাকার ব্যবসায়ী !

1435

শুরুটা হয়েছিল মায়ের দেয়া ৯৪৮ টাকায় লাকড়ির (জ্বালানী কাঠ) ব্যবসা দিয়ে। লাভ হচ্ছিল ভালোই। ব্যবসা প্রসারের চিন্তা করছিলাম। এক সময় ধান ঝাড়া মেশিন নজরে আসে। কুমিল্লা থেকে আসতো এগুলো।

কষ্ট ও সময় সাশ্রয়ী হওয়ায় মেশিনগুলো কৃষকের কাছে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে।

কাঠের ব্যবসার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেইতো এ মেশিনগুলো তৈরী করতে পারি-এমন চিন্তা থেকেই ৩০ বছর পূর্বে কালীগঞ্জে প্রথম ধান ঝাড়া মেশিন তৈরী করা শুরু করেছিলাম।

গড়ে তুলেছি দিশারী কাঠগোলা এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ নামের ধান ঝাড়া মেশিন তৈরীর কারখানা। কথাগুলো বলেছিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার পশু হসপিটাল পাড়ার দিশারী কাঠগোলা এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের কর্ণধার আলহাজ্ব লুৎফর রহমান (৬৫)।

দিশারী কাঠগোলা এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপের ধান ঝাড়া মেশিন তৈরীর কারখানাটি বর্তমানে কোটি টাকার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যেখানে ৪০-৫০জন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। সততার সাথে কঠোর পরিশ্রমে তিলে তিলে গড়ে তোলা এ কারখানাটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে যথেষ্ঠ ভুমিকা রাখছে বলে তিনি মনে করেন।

এই সংবাদদাতার সাথে আলাপকালে লুৎফর রহমান জানান, আশির দশকে কুমিল্লা থেকে ধান ঝাড়া মেশিন কালীগঞ্জে আসতো। দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

একসময় মনে হলো এ মেশিনতো আমরাও তৈরী করতে পারি। সেই চিন্তা থেকেই ১৯৮৭ সালে নিজেই ধানঝাড়া মেশিন তৈরীর সিদ্ধান্ত নেই। মায়ের দেয়া ৯৪৮ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে আজ সেই ব্যবসা কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখা তার ব্যবসায় ৫৫ লাখ টাকার ঋণ সহায়তা দিয়েছেন।

প্রথম দিকে একটি মেশিন ১৫০০-২০০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হতো। জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে ওই একই মেশিন সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

মেশিনে ব্যবহৃত কিছু যন্ত্রাংশ কুমিল্লা বিসিক থেকে আনা হয় এবং কাঠ স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করা হয়। লোহার পাত ও রড দিয়ে ধানঝাড়া মেশিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কারখানাতেই তৈরী করা হয়। লেদের শ্রমিক, কাঠের শ্রমিকসহ কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০জন শ্রমিক তার এই কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে বলে তিনি জানান।

কারখানার নিয়মিত শ্রমিক রাশেদুল ইসলাম বলেন, ধানঝাড়া মেশিনের কাঠের পাঠাতনে তারের কাঁটা বসিয়ে দৈনিক ৭’শ থেকে ৮’শ টাকা আয় করেন। শ্রমিক আব্বাস আলী বিশ্বাস বলেন, তিনি মেশিন ফিটিংস এর কাজ করে দৈনিক ৭-৮’শ টাকা আয় করেন।

উদ্যোক্তা লুৎফর রহমান বলেন, এ মৌসুমে কারখানা থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মেশিন বিক্রি করা হয়েছে। কারখানায় উৎপাদিত মেশিন রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাচোল, সাতক্ষীরা, নড়াইল, পাংশা, ফরিদপুর, বোয়ালমারী, যশোর, ফকিরহাট, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।