করোনা ঠেকাতে ফুসফুস ভালো রাখবে যে ৬ টি খাবার

4816

করোনাভাইরাসে আ’ক্রা’ন্ত হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস। ফুসফুস আমাদের দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। শ্বাস-প্রশ্বাস, রক্তে অক্সিজেন প্রবেশ, কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনসহ দেহের অনেক জরুরি কাজ করে।

সুস্থ ফুসফুস ছাড়া স্বাভাবিক জীবনযাপন কল্পনাও করা যায় না। তাই শরীরের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে ফুসফুসের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত বায়ু দূষণ ও ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্ষতি হয়ে থাকে। তবে কিছু খাবার রয়েছে, যা ফুসফুসের জন্য ভালো।

আসুন জেনে নিই যা খেলে ভালো থাকে ফুসফুস-

১. আপেলে থাকা ফেনোলিক যৌগ ও ফ্ল্যাভনয়েড শরীরের প্রদাহ কমায়। ইউরোপিয়ান জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যেসব শিশু নিয়মিত আপেলের জুস পান করে তাদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা কম হয়।

২. গ্রিন টি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফুসফুসের প্রদাহ কমায় ও কার্যকারিতা বাড়ায়। ২০১৭ সালে কোরিয়ান এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, যারা নিয়মিত দুই কাপ গ্রিন টি পান করেন, তাদের ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ে।

৩. ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ায়।

৪. বাদাম ও বীজ ফুসফুসের জন্য খুবই উপকারী। আখরোট, পেস্তাবাদাম কাজুবাদাম, চিনাবাদাম, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, ফ্ল্যাক্সসিডে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম, প্রয়োজনীয় খনিজ থাকায় এগুলো শ্বাসতন্ত্র ভালো রাখে।

৫. আদা-রসুন ফুসফুসের জন্য ভালো কাজ করে। এসব মসলায় থাকা অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান ফুসফুস পরিষ্কার রাখে ও কার্যকারিতাও বাড়ায়।

৬. গোলমরিচে থাকা ক্যাপাসেইসিন উপাদান শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা কমায়।

এছাড়া ফুসফুসের যত্নের কথা বললে প্রথমেই বলতে হয় ধূমপান ত্যাগের কথা। ধূমপায়ীদের ফুসফুসের কোষ স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দুর্বল হয়ে থাকে বলে তাদের শ্বাসতন্ত্রের রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও সবার থেকে বেশি থাকে।

ইতিমধ্যেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ধূমপায়ীদের করোনাভাইরাসের ‌‘অ্যাট রিস্ক’ বা ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, অর্থাৎ সাধারণ মানুষ অপেক্ষা ধূমপায়ীরা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, যার জন্য ধূমপান ত্যাগ আবশ্যক। এই আপৎকালীন সময়টা ধূমপান ছাড়ার অভ্যাসের জন্য আদর্শ সময়।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৩০ থেকে ৪৫ মিলিলিটার পানি প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ কারও ওজন ৬০ কেজি হলে তার দৈনিক পানির চাহিদা হবে ন্যূনতম ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৭ লিটার। পর্যাপ্ত পানি পান করলে ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তির পাশাপাশি দেহ টক্সিনমুক্ত থাকবে এবং কোষকে উজ্জীবিত রাখতে সাহায্য করবে।

ফুসফুস ভালো রাখতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা। ব্যায়াম করলে দেহে প্রচুর অক্সিজেন প্রবেশ করে এবং বারবার সম্প্রসারণ-প্রসারণের ফলে ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

প্রতিদিন ১৫-৩০ মিনিট জোরে হাঁটা, প্রাণায়াম, বড় করে শ্বাস নেওয়া এবং সময় নিয়ে শ্বাস ছাড়া, মেডিটেশন ইত্যাদি ব্রিদিং এক্সারসাইজ একই সঙ্গে ফুসফুস এবং সম্পূর্ণ দেহের জন্য ভালো। পাশাপাশি প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা নির্বিঘ্ন ঘুমও সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।

মোট কথা ধূমপান না করা, নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামে ফুসফুস ও সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, যা শুধু করোনাই নয় যেকোনো ধরনের অসুস্থতা থেকেই আমাদের সুরক্ষা দেবে।