ফারিয়া (ছদ্মনাম) হতে চেয়েছিলেন মডেল। এ জন্য অনলাইনেই মাধ্যম খুঁজছিলেন কিভাবে মডেল হওয়া যায়। পেয়েও গেলেন একটি ফেসবুক পেজ। ফিমেল মডেল এজেন্ট―যারা মডেল বানানোর কাজ করে থাকে।
সেই পেজে যোগাযোগ করে নিজের সব হারালেন। মডেল বানানোর কথা বলে তাঁকে ফাঁদে ফেলা হয়। একসময় তাঁকে মদ খেতে বাধ্য করে ধর্ষণ করে ওই পেজের সংশ্লিষ্ট দুই যুবক।
এমনই মর্মান্তিক ও রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন মডেল হতে চাওয়া ওই তরুণী। ক্যামেরার সামনে এসে বললেন কিভাবে তাঁকে মডেল বানানোর ফাঁদে ফেলে ফেনীতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়।
তরুণী জানান, প্রথম দিনই জানানো হয় তাঁকে নির্বাচন করা হয়েছে এবং সজিব খান নামের একজনের নম্বর দেওয়া হয়।
তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পর বলা হয় শুটিংয়ের জায়গাটা ঢাকা থেকে একটু দূরে। ফেনীর আগে। তিনি বলেন, “আমি ভাবলাম, যাই ওখানে। আমাকে বললেন, ‘তুমি ড্রিংকস করো?’
আমি বললাম, না। তিনি বললেন, ‘একটু খেলে কী হয়?’ আমি বললাম, না। আর আমাকে আপনারা কী খাওয়াইছেন? এমন লাগছে কেন? এটা বলার পর আমি কান্না শুরু করলাম। “
তরুণী বলেন, “আমাকে সরাসরি এবার বলা হয়, ‘তুমি কি ওর সঙ্গে থাকবা?’ আমি বললাম, না। তিনি বললেন, ‘না থাকলে তোমার একটা ভিডিও বানাব সুন্দর করে। তারপর সেটা ছেড়ে দেব।
তখন তোমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। ‘ এরপর ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও আমাকে শারীরিক সম্পর্ক করতে হয়। এক পর্যায়ে দুজনই রেপ করে। “
ফারিয়ার (ছদ্মনাম) এমন ঘটনা নিয়মিত। শুধু যে অনলাইনেই মডেল বানানো হচ্ছে তা-ই নয়।
নায়িকা বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট পরিচয় দেওয়া অনেকেই। আর এমনন ঘটছে খোদ এফডিসি ও তার ভেতরে-বাইরে।
সামাজিকতার কথা ভেবে ফারিয়া বিষয়টি কাউকে বলেননি। সজিব খানের ঠিকানায় পৌঁছে জানতে পারেন তিনি ওই জায়গা ছেড়ে চলে গেছেন।
তবে সেখানকার এক দোকানদার জানান, সজিবের এমন কাণ্ডকারখানা নিয়মিত। সে রকমই চলত ওই বাসাতেও।
নায়িকা কিংবা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই শুধু নয়, সর্বস্ব হারান একজন নারী। যার ফলে জীবনে কোনো দিকেই আর উঠে দাঁড়ানো হয় না।
আন্ডারকাভারের কাছে অকপটে সেসব খুলে বলেছেন। এফডিসিতে নায়িকা হতে গিয়ে খ ম মোর্শেদ নামের একজনের নিকট শুধু টাকাই নয়, খুইয়েছেন সব। মোর্শেদ তাকে ব্যবহার করেছেন স্ত্রীর মতো।
এমন অসংখ্য ফাঁদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সকলকে এসব বিষয়ে সতর্ক করেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বলেন, বিনোদনের যে জগৎ এটার মার্কেটটা এখন অনেক বড় বাংলাদেশে।
ওটিটি থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়া, টেলিভিশন। এ রকম অনেক অভিযোগ আসছে।
শুধু পুলিশ চাইলেই যে বন্ধ হয়ে যাবে, এমনটা নয়। কারা প্রতারণা করছে, কারা নামে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে এসব করছে তাদেরকেও চিহ্নিত করতে হবে।