দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ সতীসাধ্বী রমণী। বাণীটি অতি ক্ষুদ্র হলেও এর তাৎপর্য ব্যাপক। একজন নারীর সংশ্রব ব্যতিত পুরুষের জীবনের পরিপূর্ণতা আসে না।
সুখে-দুঃখে নারীই তার জীবনসঙ্গিনী। সুতরাং দাম্পত্য জীবনে এ নারী যদি পুত-পবিত্র সচ্চরিত্রা হয়, তাহলে জীবন স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়।
সমস্যা সংকুল জীবনেও শান্তির ফল্গুধারা বয়ে যায়। যে শান্তি নারী-পুরুষের বৈবাহিক জীবনের মাধ্যমে শুরু হয়। বিবাহিত জীবনে নেককার স্ত্রীর গুরুত্ব অত্যধিক।
তাই ইসলাম স্ত্রীকে দিয়েছে সর্বোত্তম মর্যাদা। বৈবাহিক জীবনে নারী অধিকার সম্পর্কে কুরআন হাদিসের বক্তব্য তুলে ধরা হলো-
নারীর বিয়ে- ইসলাম পূর্ব যুগে বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়াই মহিলাদেরকে পুরুষের মালিকানাধীন মনে করা হতো এবং একজন পুরুষ যত খুশী বিয়ে করতে পারতো। ইসলাম নারীদের জন্য বিবাহকে বৈধ এবং আবশ্যক করেছেন। এ বিবাহের মাধ্যমে একজন নারীকে একটি সম্মানজনক আসনে সমাসীন করা হয়।
আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যেকার পুরুষ আর মহিলাদের মধ্য থেকে তাদের বিয়ে দিয়ে দাও যারা দাম্পত্য ছাড়া জীবন অতিবাহিত করে।’ (সুরা নূর)
নারীর মোহর- মোহরকে নারীর ইজ্জতের গ্যারান্টি করা হয়েছে। ইসলাম পূর্ব যুগে নারীরা তাদের বিয়ের দেন মোহরের মালিকানা পেত না। ইসলাম নারীর মর্যাদা রক্ষায় মোহরের বিধান প্রবর্তন করে তা স্বামীর উপর ফরজ সাব্যস্থ করেছেন। তাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, যদি মোহর রূপে অঢেল সম্পদও দেয়া হয় তা ফেরত নেয়া যাবে না। কেননা মোহর বিবাহের শর্ত হওয়ায় সেগুলো মহিলার মালিকানাধীন হয়ে যায়।
আল্লাহ বলেন, আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে (কিছু) অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। (সুরা নিসা : আয়াত ৪)
স্ত্রী হিসেবে নারী- মোহর নির্ধারণের মাধ্যমে নারী-পুরুষ পরস্পর ইজাব-কবুল করে একজন পুরুষ একজন নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে। স্ত্রী হিসেবে নারীকে এক স্বকীয় মর্যাদায় অধিষ্টিত করেছে ইসলাম। তাই স্বামীকে স্ত্রীর সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সদাচরণের ভিত্তিতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে জীবন-যাপন কর।’ (সুরা নিসা)
সংসার জীবন সুখের লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের আবরণ স্বরূপ এবং তোমরাও তাদের জন্য আবরণ স্বরূপ।’ (সুরা বাকারা)
স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘মহিলাদের পুরুষদের উপর যেরূপ অধিকার আছে তেমনি পুরুষদেরও মহিলাদের উপর অধিকার রয়েছে।’ (সুরা বাক্বারা)
তত্ত্বাবধানের অধিকার- বিবাহের মাধ্যমে একজন নারী স্ত্রীর মর্যাদা লাভ করার পর পুরুষকে নারীর যাবতীয প্রয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এর মধ্যে তার খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান, অলংকার ইত্যাদি অর্ন্তভুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষ মহিলাদের রক্ষক এবং ব্যবস্থাপক এই জন্য যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের মধ্য থেকে একজনকে অন্যজনের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। আর এই জন্যও যে, পুরুষ তাদের জন্য নিজের সম্পদ ব্যয় করে।’ (সুরা নিসা)
পরিশেষে বলা যায়, ইসলাম নারীকে জীবনের সকল দিকে থেকে এক অনুপম মর্যাদা ও অধিকারে অভিষিক্ত করেছে।
কুরআনের সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে ইসলাম পুরুষের জীবন পরিচালনার ন্যায় নারীদেরকেও সম্মান ও মর্যাদা এবং মৌলিক অধিকার প্রদান করে এমন এক সভ্যতার গোড়াপত্তন করেছে। যা নারীর ভুলুন্ঠিত মর্যাদা ও অধিকার ফিরে পেতে হলে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই।
নারীদেরকে পু্রুষের অধীনস্থ করা হয়েছে আবার নারীদেরকে আলাদাভাবে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারীও করা হয়েছে।
যা কিছু শ্রেষ্ঠ হয়েছে তা তার বিশেষ গুণের জন্যই –তাই সকল নারীই শ্রেষ্ঠ হবে না,শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হতে হলে তাকে কিছু গুণাবলী অর্জন করতে হবে । নেককার স্ত্রীর যে মর্যাদা তা কি কোনো বদ মহিলার মর্যাদার সমান হতে পারে!?!
নিশ্চয়ই নয় । একজন নেককার স্ত্রী তার স্বামীকে বাদশাহ বানিয়ে রাখে , সুবহানাল্লাহ্ ।
নেককার স্ত্রীকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলা হয়,এখন বদকার কোনো মহিলাকে কি সম্পদ বলা যেতে পারে?? কাজেই শ্রেষ্ঠ সম্পদ হতে হলে সেরূপ বৈশিষ্ট্যও তো থাকা চাই।
ঈমানের পর সর্বোচ্চ নিয়ামত হচ্ছে সচ্চরিত্র স্বামীকে মুহব্বতকারিনী, চরিত্রবতী ও সন্তানবতী স্ত্রী সুবহানাল্লাহ্ ।এরূপ মহিয়সী নারীকে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম উনার রাজত্ব অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে।
আর কুফরীর পর সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট বস্তু হচ্ছে কর্কশভাষীনী ও অসচ্চরিত্রা স্ত্রী। নাঊযুবিল্লাহ্ ! কাজেই প্রত্যেক স্ত্রীরই স্বামীকে মুহব্বত করতঃ সচ্চরিত্রের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে,তবেই সে তার স্বামীর জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হবে ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে স্ত্রী প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনসহ নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।